মোঃ রকিব হাসান
সেখানে দিন আসে চুপটি করে
লাউপাতার জলে চিকিচিকি খেলা করে রোদ্দুর
স্যাঁতস্যাঁতে উঠানের পাড়
কত অচেনা ডেউ পড়ে আছড়ে বড় অভিমানী ওরা
যায় চলে আর হয়না এ মুখো
একটি মাত্র ঘর, সে আমার সপ্ন খোলা লোচনে।
মাটির দেয়াল
ফোটো টিনের চালায় মিটিমিটি ভোরের হাসি
ধানের গোলায় বিন্দু বিন্দু ভানুর চাহনি
ওরা খেলা করে দিনভর আপন খেয়ালে
ঝিরঝির মেঘের জল গলে আসে আমাদের বিছানায়
মেটে বাসন ভরে উঠে
বারবার আসি ফেলে ছিকল আটা দুয়ারে
তালপাতায় ছাওয়া উনুনের পাড়
তুমার কাচের চুড়ি করে ঝনঝন
উঠানের কোনে ছোট মরিচের চাড়া
পশ্চিমের ক্ষেতের সেবারের ফলা পেয়াজ
গড়াগড়ি খায় আমার পান্তা ফলকে
এ বহু অন্তরালে, সে আমার সপ্ন খোলা লোচনে।
তোমার ভেজা শাড়ির আচলে মুখ লোকায় আমাদের ভালবাসা
দিকবেদীক ছোটাছুটি তার
ছোট ছোট পা দুখানি
হয়ে উঠে শিল্পিক তুলি
উঠান সে তার অবুঝ চিত্রপট
কোলাহলের এখানে ছুটি, সে আমার সপ্ন খোলা লোচনে।
ও পাড়ায় খোলা প্রান্তর
বিঘত সলিল তলে আমাদের দু বিঘে মাটি
হলদে-সবুজ ধান
দোল খায় দক্ষিণা সমীরণে
জুড়ায় আমার ঘামে ভেজা চোখ
বুক যায় ভরে পাকা ধানের গন্ধ মাখান বাতাসে
সকাল গরায় মাথার উপর
আষাঢ়ের কালিক প্রখর অরুণ
ক্লান্ত ঝাপসা নজর সর্পীল আলে
শৈবলিনী ছুঁয়ে আসা হাত্তয়ায় ঘোমটা উড়ায়ে তোমি
বেগুন ভাজা, ডালের বরা, ছোট পুটির ঝোল
ধোয়া উঠা ভাতের থালা
তাল পাতার বাতাসে তৃপ্ত প্রবল আমার প্রাণ
শ্রাবণের আগমনী মেঘেরডাক
বাতাসে বাদলের ভেজা গন্ধ
সাদা বকের ঝাপটানো আর্দ্র পালক
শিওরে দারিয়ে তোমার প্রতীক্ষীত নয়ন
আমি ফিরি
আমার
চেতনে সিক্ত নীড়ে, সে আমার সপ্ন খোলা লোচনে।
কেরোসিনের আলোয় তোমার মাস্টারনীর বাচন
তেল মাখানো বিরই ধানের মুড়ি
মুখে পুড়ে অপলক চেয়ে
শুনি আমাদের আগামীর নিস্বন ধ্বনি
মিশে থাকে কলকলানো নদীজ
উড়ে আশা সন্ধেয় বায়ুখানী
বিলি কেটে যায় তোমার কৌশেয় কাল কেশে
ঝিঝি পোকার পাখায়
গুড় গুড় মেঘ বয়ে আনে রাত
বাকি সংসার যেন নিদ্রিত অতিদূর
তোমার বাহুডোরে – রেশম কোমলতায় ভালবাসা মেশানো প্রেমে- ডুবে রই দুজনে
আসে ঘুম ভরে আঁখি
প্রশান্ত রয় আমাদের জুড়িয়ে উঠা মন
গভীর বাসনায় বসবাস
সে আমার সপ্ন
দিনের খোলা আলো থেকে নিকষ অন্ধকার
তন্দ্রা থেকে বেঘোর ঘুমে
আর
সে আমার সপ্ন খোলা লোচনে।